রাজশাহী থেকে মঈন উদ্দীন : রাজশাহীতে সোমবার বইছেছিলো মৃদু শৈত্য প্রবাহ। তবে মঙ্গলবার তা কেটে গেছে। কিন্তু পিছু ছাড়েনি। সোমবারের চেয়ে দিনের সর্বোনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেড়েছে শীত। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। সোমবার রাজশাহীতে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া দপ্তরের হিসেবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালেই তা শৈত্যপ্রবাহ।
এদিকে, মঙ্গলবার ভোরের দিকে রাজশাহী অঞ্চলে পড়ছে ঘন কূয়াশার। কমে আসছে দৃষ্টিসীমা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমশীতল হাওয়া। এতে কাঁপছে উত্তরেরে এ জনপদ। বিশেষে করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষগুলোর দুর্ভোগের অন্ত নেই। সকালে পথের ধারে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে ছিন্নমূল মানুষদের। নিম্ন আয়ের মানুষেরা শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকানগুলোয়। চলতি সপ্তাহে সরকারি, সেবরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন শীতার্তরা।
নগীর দাশপুকুর রেলওয়ে বস্তির পানতারা বলেন, ছেলেমেয়ে নিয়ে তাদের পরিবারের সদস্য পাঁচজন। স্বামী রিকশা চালান। আর তিনি অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। সামান্য আয়ে সবার জন্য শীতবস্ত্র কেনা সম্ভব হয়ে ওঠেনি তাদের। ফলে সরকারী সহায়তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। এমন গল্প ওই এলাকার আরো অনেকেরই।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, শীতের কারণে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তির বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এদের অনেকেই ডাইরিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, মঙ্গলবার রাজশাহীতে দিনের সর্বোনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সোমবার তা ছিলো ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তপমাত্রা।
রাজশাহীতে গত সপ্তাহ থেকেই তাপমাত্রা কমছে। এর আগে গত শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর শনিবার ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রোববার ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তিনি বলেন, তাপমাত্রা কমে আসায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমছে। তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে মৃদু, ৮ ডিগ্রির নিচে নামলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আপাতত শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও যে কোন মুহূর্তেই তাপমাত্রা করে আবারো শৈত্যপ্রবাহে রুপ নিতে পারে।
এদিকে, ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, ডিসেম্বরজুড়েই রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। ডিসেম্বরের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশী শীত অনুভূত হবে আগামী জানুয়ারীতে। ওইসময় এ অঞ্চলে এক থেকে দুটি তীব্র (৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস)) শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
Leave a Reply