দিনাজপুর থেকে মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ: বিদ্যুৎ খাতের মাষ্টারপ্লান অনুসারে ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যোগ হবে।
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট নিয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াট। ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে উৎপাদিত হবে ৬ হাজার ৩শত ৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে বর্তমানে একমাত্র দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরকারি ভাবে মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এবং তার উত্তর পশ্চিম কোণে ৩০০ মেগাওয়াট আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চায়না হারবিন ইলেকট্রনিক্স ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানী লিমিটেড।
২০১৮ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ি, পায়রা, রামপাল, কক্সবাজারের পেকুয়া ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। অদুর ভবিষ্যতে আমদানি নির্ভরতার পাশাপাশি দেশী কয়লা উত্তোলন করে এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করতে চায় সরকার। এলক্ষ্যে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কয়লার উৎপাদন ও বৃদ্ধি করতে চায়।
বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি হবে ১ হাজার দুইশত মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। এসব কেন্দ্রের কাঁচামাল হিসেবে দেশী কয়লা ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ৫২ শতাংশ পূর্বে আমদানি নির্ভর কয়লা, বাকিটা দেশী কয়লা দিয়ে পূরণ করা হবে। তাই কয়লা উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এ লক্ষ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও বিরামপুরের বর্তমান মাইনিং এলাকার কাছে উত্তর ও দক্ষিণ মাইন বৃদ্ধির সম্ভাবনা যাচাই করা হবে। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ফর ডেভেলপমেন্ট অফ দিঘীপাড়া কোলফিল্ড অ্যাট দিঘিপাড়া দিনাজপুর প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যেগ নেওয়া হবে। কয়লা উত্তলনে প্রস্তুত করতে মেট ব্যয় করা হবে ২০ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এর মধ্যে কৃষি শস্যের ক্ষতিপূরণ দিতে সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (বিসিএমসিএল) প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সার্ভে করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ৬০টি বোরহোল ড্রিলিং, ৬ কিলোমিটার থ্রিডি সাইজমিক সার্ভে, হাইড্রোজিওলজ্যিক্যাল স্ট্যাডি, চারটি প্রোডাকশন কুপ খনন ও ২৪ বর্গ কিলোমিটার টপোগ্রাফিক সার্ভে।
কয়লা উত্তোলন এলাকায় পুন:বাসন, জমি অধিগ্রহণ ও লিজের পরামর্শক সেবার পাশাপাশি স্থানীয ও বৈদেশিক পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রকল্পের ১৯ ক্যাটাগরিতে মোট ২৩ জন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। এখাতে প্রায় আড়াইকোটি টাকা ব্যয় হবে। কয়লা খনি এলাকা পরিদর্শনের জন্য ভাড়া বাবদ ব্যয় করা হবে আরও ৬৬ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০১৯ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রাথমিকভাবে ভূ-গর্ভস্থ (আন্ডারগ্রাউন্ড) পদ্ধতি প্রয়োগ করে কয়লা তোলার কথা চিন্তা করছে সরকার। এ পদ্ধতিতে প্রতি বছর ৩ মিলিয়ন পাউন্ড কয়লা উত্তোলন করা যেত। সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে উন্মুক্ত (ওপেন পিট) পদ্ধতিতে কয়লা তোলার কথা চিন্তা করছে। ফলে প্রতি বছর এখান থেকে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড কয়লা তোলা যাবে। এ কয়লার পুরোটাই দেশের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ওপেনপিট পদ্ধতিতে বছরে ৫ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশী কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে দিঘীপাড়ায় খুব শিঘ্রই আমরা বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ দিবো। তবে নতুন করে কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন মন্তব্য করেননি জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার।
Leave a Reply