এশিয়ানবার্তা: যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সঙ্গে দুই দায়িত্ব পালন করবেন। আপাতত তার মন্ত্রণালয় পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সরকারের ক’জন নীতি নির্ধারক মন্ত্রী। তিনি একাধারে দলের ও সরকারের দুই দায়িত্ব পালনে সফল হবেন বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এক সফরে তিনি অবকাঠামোগত উন্নয়নে পদক্ষেপ নিবেন ও দলের ভিত সুসংগঠিত করতে কাজ করবেন।
আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন। অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চমক দেখাতে পেরেছেন। তার সরেজমিনের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করেন। মন্ত্রী হিসাবে কাদের কারিশমা দেখান। সেই সঙ্গে চীনের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক আরো জোরালো, যোগাযোগ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন, বিশেষ করে পদ্মা সেতু সফল করে নেওয়ায় ওবায়দুল কাদেরের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।
সূত্র জানায়, আর এই যোগাযোগ ও সাফল্য তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাইয়ে দিতে সহায়তা করে। ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে চার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মূল এজেন্ডা হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দলকে সুসংগঠিত করা, এই জন্য দলের সাংগঠনিক ভিত আরো সুদৃৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া, নেতা কর্মীদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক আরো বাড়ানো, তাদেরকে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা সফর করে সেখানে গিয়ে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা, দলের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের উদ্যোগ নেওয়া। অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করা।
দলের সম্প্রচার ঘটানো ও কর্মী বাড়ানো। নেতাদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করা। তিনি নিজেও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে আরো সুসংগঠিত করার কথা বলেছেন। বলেছেন, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আরো গুণগত পরিবর্তন হবে। এই চেঞ্জ মেকার দেশরতœ শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণ বদলাতে হবে। তিনি আরো বলেন, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এছাড়াও তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবেন বলেও জানিয়েছে।
তার আর একটি এজেন্ডা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করা। তিনি দলীয় অবস্থান থেকে এবং সরকারের মন্ত্রী হিসাবে এই ব্যাপারে কাজ করবেন। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করার জন্য তিনি দলীয় ভাবেও কাজ করবেন। দলের নেতা কর্মীদের কাজে লাগাবেন। সামজিক সচেতনতা গড়ে তুলবেন। তিনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক পরাশক্তিকে পরাজিত করা আমার একটি অন্যতম এজেন্ডা।
তিনি বলেন, আমরা দুটি এজেন্ডা হাতে নিয়েছি। সাম্প্রদায়িক শক্তি দূর করা ও আগামী নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্ততি নেওয়া। বেশি এজেন্ডা হাতে নেয়া উচিত নয়। বেশি এজেন্ডা নেওয়া হলে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা কঠিন। অনেক ডিম একসঙ্গে এক ঝুড়িতে রাখলে ভেঙে যেতে পারে।
এই দুটি মূল এজেন্ডার বাইরেও ওবায়দুল কাদেরের আরো দুটি এজেন্ডা রয়েছে। তার তৃতীয় এজেন্ডা হচ্ছে সব দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আরো জোরালো করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আরো জোরদার করা। বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব কমানো। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে আসা। এই জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দলের সভাপতির নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা। আওয়ামী লীগের ও সরকারের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখেই তিনি কাজ করবেন। তাকে সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।
লক্ষ্য হচ্ছে শেখ হাসিনার অধিনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান বিধানে কোন পরিবর্তন আনা হবে না। বিএনপিকে কৌশলে নির্বাচনে নিয়ে আসা হবে। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা হলেও যাতে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতাসীন হতে পারে। বিএনপি কাউন্সিলে আসলে ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি। সমঝোতা চান। এই জন্য তিনি বলেছেন, তারা সম্মেলনে আসলে তাদের অভিনন্দন মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারতাম। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খেসারত দিচ্ছে। সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে কোথাও বিরোধীদলের স্ট্যাটাস নাই। আবার যদি তারা ভুল করে তবে ভুলের চোরাবালিতে আটকে থাকতে হবে।
তার চতুর্থ এজেন্ডা হচেছ বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা আরো বাড়ানো। এই জন্য সরকার যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করার সুবাদে সব এলাকা সম্পর্কে জানবেন এবং যোগাযোগ মন্ত্রী হিসাবে তিনি প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট তৈরিতে উদ্যোগ ে নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন। ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, অনেকে ভাববেন আমি সড়কের দায়িত্ব পালন করি। কীভাবে দল চালাবো। আমি নিজেকে মন্ত্রী ভাবি না। এখন আমার জন্য আরো ভালো হয়েছে। একদিকে রাস্তা দেখবো। সেই সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের দুঃখ বুঝবো।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ মন্ত্রী হিসাবে যখন যেখানে গেছেন, সেখানে যাওয়ার আগে তিনি তার সঙ্গে কথা বলেছেন। কি করবেন জানতে চেয়েছেন। আবার কি করেছেন অগ্রগতি কতখানি হয়েছে তাও অবহিত করেছেন। এমনকি কি কি করা দরকার তাও জানিয়েছেন। অনেক সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে না পারলেও তাকে মোবাইল ফোনে এসএমএস করে পাঠান। প্রধানমন্ত্রী তার এসএমএস এর মাধ্যমে যোগাযোগ খাতের সব কিছুই সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেন। এই কারণে প্রধানমন্ত্রী তার কাজে সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী তার এই বিষয়টি পছন্দ করেছেন।
কাদেরের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, গত সাত বছর আগে যখন সৈয়দ আশরাফকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল ওই সময়ে ওবায়দুল কাদেরের প্রত্যাশা ছিলো কেউ নন তিনিই হবেন দলের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সেটা না হওয়ার কারণে তিনি কিছুটা মর্মাহত হন। অভিমানও করেন। নিজেকে কিছুটা সরিয়েও নেন। সেই হিসাবে কিছুদিন দূরেও থাকেন। কিন্তু তার ভাগ্য খুলে যায় সৈয়দ আবুল হোসেনের কারণে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর পদত্যাগ করেন আবুল হোসেন।
তার পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময়ে মেনে নিতে চাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা গ্রহণ করেন। এরপর ওই পদে দায়িত্ব নেন ওবায়দুল কাদের। আর মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে ওবায়দুল কাদের একের পর এক কারিশমা দেখাতে শুরু করেন। দেশের অনেক স্থানেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটান। পার্বত্য এলাকায় সেনাবহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর দিয়ে রাস্তা তৈরি করান। পাশাপাশি ঢাকা চট্টগ্রাম ফোর লেনসহ বেশ কয়েকটি মহাসড়কের কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন।
Leave a Reply