শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়া শেরপুরে চুরির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিরাতেই একাধিক চুরির ঘটনার ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার ভোরে শেরপুর কলেজ রোড এলাকায় রানা মাইক সার্ভিস সেন্টার থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। গত এক সপ্তাহে ৮টি চুরি ও একটি ডাকাতির ঘটনায় ুআইন শৃক্সক্ষলার অবনতি ঘটলেও রহস্যজনক কারনে ১টি ছাড়া আর কোন ঘটনায় মামলা নেয়া হয়নি। এসব ধারাবাহিক চুরির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসি।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে যায়, গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মধ্যরাতের ঘটনা। উপজেলার ঘোগা হাটখোলায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে সশস্ত্র ডাকাতদল ট্রাক দিয়ে বেরিকেড সৃষ্টি করে গরু ভর্তি ট্রাক লুটে নেয়। এ সময় গরু ব্যাপারী, চালক, হেলপারসহ ৫জনকে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে ডাকাত সদস্যরা। একইরাতে উপজেলা পরিষদের সামনে মহাসড়ক ঘেঁষে পূর্বে অবস্থিত মজিবর রহমান গার্লস স্কুল মার্কেটের দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা।
এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার, চুলা, এলইডি টেলিভিশনসহ নগদ টাকা লুটে নেওয়া হয়। একইভাবে গত বৃহস্পতিবার (২৭অক্টোবর) ভোর রাতে শহরের প্রাণকেন্দ্র বাসষ্ট্যান্ডে অবস্থিত অভিজাত বিপণিবিতান উত্তরাপ্লাজায় দুর্বৃত্তরা হানা দেয়। সাদিক কসমেটিকস ও অনিক বস্ত্র বিতানের সাটারের তালা ভেঙে নগদ ৪০হাজার টাকা, ১৫টি কম্বল ও ২৫হাজার টাকার কসমেটিকস সামগ্রী লুটে নেয় তারা।
একইরাতে উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়ন পরিষদে চোরদল হানা দিয়ে ল্যাপটপ, দু’টি লেমিনেটিং মেশিনসহ বিভিন্ন মালামাল লুটে নেয়। পরদিন শুক্রবার (২৮অক্টোবর) চুরির মালামাল উদ্ধারে গিয়ে চোরের স্বজনদের হামলায় ৩জন গ্রাম পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। এছাড়া বুধবার (২৬অক্টোবর) রাতে শহরের নয়াপাড়ায় জনৈক হায়দার আলীর বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে একটি পালসার মোটরসাইকেল লুটে নিয়ে যায়।
একইরাতে উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মহিপুর বাজারে অবস্থিত গোপীনাথের মুদি দোকান ও জনি মিয়ার স্বর্ণের দোকানে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা। এসময় স্বর্ণ, রোপা, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল লুটে নেয়া হয়। একইদিন ভোর রাতে থানার অদূরে অবস্থিত হাজিপুর এলাকায় সোলায়মান হোসেনের গরুর খামারে হানা দিয়ে দুর্বৃত্তরা ৫টি গরু লুটে নেয়। একইভাবে উপজেলার রাজাপুরে মাহাতাব হোসেন পুটুর বাড়ি থেকেও ৩টি গরু লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা।
এছাড়া সুঘাটের মধ্যভাগ থেকে জনৈক কৃষকের বাড়ি থেকে ২টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। শেরপুর কলেজ রোড নামক জনবহুল এলাকায় গতকাল সোমবার ৩১ অক্টোবর ভোর ৬ টার দিকে রানা মাইক সার্ভিসের সামনে একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্টো-চ-১১-১৮১৪) থামিয়ে ৪/৫ জন দুর্বিত্তরা দোকানের সাটারের ক্লাম ভেঙে ভিতরে ঢুকে ১টি এম.আর সেট, ২টি মোবাইল ফোন ও ৬টি ইউনিট লুটে নিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী হোসেন আলী জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে শেরপুর শহর টাউন ফাঁড়ি পুলিশের প্রধান কর্মকর্তার পদ ফাঁকা রয়েছে। বর্তমানে একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক এই দায়িত্ব পালন করছেন। এই কর্মকর্তা শহরের ফুটপাতের দোকানগুলো ও বিভিন্ন যানবাহন ঠেকিয়ে টাকা উত্তোলনে ব্যস্ত থাকেন। এমনকি প্রতিদিন রাত ১০টার পর শহরের ধুনটমোড় এলাকায় গিয়ে ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান থেকে ফাও খাওয়া নিয়ে মশগুল থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
থানার চিত্রও প্রায় একই রকম। একজন উপ-পরিদর্শকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের রয়েছে নানা অভিযোগ। তারা সিংহভাগ সময় নিজ পকেট ভরার কাজে ব্যস্ত থাকেন। ইচ্ছে মাফিক মোটরসাইকেল ধরার অভিযান করে থাকেন। বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের পয়েন্টে হানা দেন। চাহিদামত টাকা পেলে সবকিছু মাফ করে দিয়ে আসেন এমন হাজারো অভিযোগ। অথচ তাদের কাছে যেসব অভিযোগ বা মামলা রয়েছে সেগুলোর কাজের ব্যাপারে তেমন কোন অগ্রগতি নেই।
ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায়দিনই চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। অথচ এসব অপরাধ রোধ করার কাজ না করে থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল মজিদ সাধুবাড়ী এলাকায় গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ছেলের সঙ্গে সঙ্গীত চর্চায় ব্যস্ত থাকেন। প্রায় নিয়মিত সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সেখানে গান-বাজনায় মগ্ন থাকছেন বলে তারা জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মো. এরফান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশি তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া গরুভর্তি ট্রাক লুটের ঘটনায় মামলার পাশাপাশি গরু উদ্ধার ও ১জন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শহরের চুরির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন।
Leave a Reply