সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জে বৈধ- অবৈধ মিলিয়ে গড়ে উঠেছে ১৬০টি ইটভাটা। সরকারি নানা নিয়মের বেড়াজাল থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বনজঙ্গল আর অন্যদিকে ভাটার কালো ধোয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ।
নিয়ম অনুসারে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর কথা। তবে ইটভাটা মালিক সমিতি বলছে, কয়লা সংকটের কারণে তারা জ্বালানি কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। আর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
সিরাজগঞ্জ জেলার ইটভাটার জন্য খ্যাত। ছোট এই জেলা ঘিরে গড়ে উঠেছে ১৬০টি ইটভাটা। প্রতিবছরই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ইটভাটা। বছরের পর বছর ধরে চলছে নতুন ইটভাটা তৈরির হিড়িক।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের কর্যালয়ের তথ্য অনুসারে সিরাজগঞ্জে ৪৬টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকিগুলোর চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক অফিসের হিসাব অনুসারে ইট পোড়ানোর লাইন্সেস অনেকের থাকলেও অনেক ইট ভাটা মলিকরা তা বছর বছর নবায়ন করেন না।
এদিকে হঠাৎ করে কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার এসব ইট ভাটায় একযোগে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে তৈরি হচ্ছে ইট। আর এতে জমির উর্বর শক্তি হারাচ্ছে। আর ইটভাটার নির্গত ধোয়ায় স্বাস্থ্যঝুকিতে পড়ছে শিশুসহ সব বয়সি মানুষ। হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।
ভাটা মালিকরা বলছেন,প্রতি রাউন্ড ইট পেড়াতে প্রায় প্রচুর পরিমাণে কয়লা লাগে। বর্তমানে টাকা থাকলেও কয়লা নেই। আর কয়লার দাম বেড়েছে তিন গুণ। যে কারণেই বাধ্য হয়ে ইট পোড়াতে কাঠের ব্যবহার করা হচ্ছে।
সেবা ইটভাটার মালিকরা বলেন, মৌসুমের এই সময়ে আমরা প্রচুর পরিমাণে ইট তৈরি করি। তাই এই সময় জ্বালানির প্রয়োজন বেশি। কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়া ও বাজারে কয়লার যোগান না পাওয়ার কারণে এবার জ্বালানি হিসাবে কাঠের ব্যাবহার করা হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী জানান, কয়লার দাম তিন থেকে চারগুণ রেড়েছে। তা বাজারেও পাওয়া যায় না।
এল আর ব্রিকসের মালিক ফারুক হোসেন বলেন,সিজনে প্রতি রাউন্ড মানে ৭ থেকে ৮ লাখ ইট পোড়াতে প্রায় ১৩০ টন কয়লা লাগে। এক হাজার টন কয়লার দাম আগে ছিল ৯০ লাখ টাকা এখন কিনতে হচ্ছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকায়। টাকা থাকলেও কয়লা পাওয়া যায় না।
রায়গঞ্জ উপজেলার ইট ভাটা মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ খান জানান, কয়লা সংকটের কারণে তারা জ্বালানি কাঠ দিয়েই ভাটা চালাচ্ছেন। তবে উপায় না থাকায় আমরা জ্বালানি কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছি।
এদিকে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন মুক্ত জীবনের সভাপতি দীপক কুমার কর বলেন,দীর্ঘদিন থেকে রায়গঞ্জ উপজেলায় নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে ইটভাটা চললেও নেই কোনো দপ্তরের উদ্যোগ। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই।
রায়গঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাচ্চু বলেন,স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রায়গঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা দেওয়ান শহিদুজ্জামান বলেন, খুব শিগগিরই তারাও অভিযানে নামবেন। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ পোড়ালেই জরিমানাসহ ইট ভাটা বন্ধের সুপারিশ করা হবে।
রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি তানজিল পারভেজ জানান, ইতিমধ্যেই তিনটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহাররোধে মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে শর্ত ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।