আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার; গ্রামীন জনগোষ্ঠীর প্রাচীনপন্থী লোকেরা নানা কিছুই মেনে চলে। এখনও গ্রাম এলাকায় বা সাধারন বাংগালী পরিবারের বউ – ঝিগন ভাসুর, শ্বশুর, শ্বাশুড়ী, মুরুব্বী, এমনকি নিজের স্বামীকেও নাম ধরে ডাকে না।
পরিবারের পুরুষ সদস্যগনও এই নিয়ম মেনে চলে অনেক জায়গায়। শহরগুলোতেও এমন বহু দেখা যায়। এটা সামাজিক রীতিও বটে এদেশের।
এই নিয়মের ব্যাতিক্রম কোনো মেয়ে করলে তাকে ভাল চোখে দেখা হয় না, অনেক সময় বেয়াড়া মনে করা হয়। অবশ্য শিক্ষিত তথা আধুনিক পরিবারে একটু কম বেশী হয়ে থাকে এই নিয়মের।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউপির প্রত্যন্ত গ্রাম শ্রীরামপুরে মহিলা বিশেষ করে বয়স্ক যারা তাদের ভাসুর, শ্বশুরের নাম উচ্চারন নিয়ে বেশ মজার তথ্য পাওয়া গেল।
এই গাঁয়ের উত্তরপাড়ার মোল্লা বাড়ীর মরহুম সাবান আলীর পরিবারের মহিলাগন কাপড় কাচা বা টয়লেট সোপকে কয় গাওঘষা। সাবান আলীর ছেলের নাম আস্তাহার আলী।
ফলে ঐ পরিবারের মেয়েরা চিনি বা গুড়ের তৈরী নাস্তাকে বলে মিঠা। সাবান আলীর ভাইপো কাজেম আলীর ডাক নাম খুদু।
এজন্য চাউলের খুদকে মহিলাগন কয় ফ্যাঁস। গ্রামের সাবেক মেম্বর মরহুম এনছাব আলী প্রামানিকের মায়ের নাম সুখীতন ও শ্বাশুড়ীর নাম কমলা বানু।
এজন্য ঐ পরিবারের মেয়েরা শুক্রবারকে বলে জুম্বাবার এবং কমলা লেবুকে কয় জামির। সাবান আলীর প্রতিবেশী মরহুম নোমাজ উদ্দিনের বাড়ীর মেয়েরা নামাজ পড়াকে বলে ছালাম থোয়া।
গাঁয়ের দক্ষিন পাড়া মরহুম পাটু হাজীর বাড়ীর মহিলাগন হলুদ – মরিচ পেষা পাটাকে বলে পাথর। পাটু হাজীর ভাইয়ের নাম চেরু শেখ। এজন্য ঐ পরিবারের মেয়েরা কেঁচো বা চ্যারাকে কয় গইড়পাড়ান্যা।
উত্তর পাড়ার মরহুম কালু শেখের বাড়ীর মেয়েরা ‘কাল’ শব্দ উচ্চারন না করে বলে রং আলা পাইল্ল্যা। যদিও এমনধারা হয়তো অনেক গ্রামেই পাওয়া যাবে খোঁজ করলে।
লেখক; সাংবাদিক ও কলাম লেখক।