এম.দুলাল উদ্দিন আহমেদ,জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ:
জীবনের পরম তৃপ্তি আর ভালোবাসা নিয়ে জড়িয়ে আছে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার প্রিয় নীড়ের তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দারা। হাসি-আনন্দে দিন কাটে প্রিয় নীড়ের ৪০ সদস্যের। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ‘প্রিয় নীড়ে’ ঠাঁই পেয়ে তারা আজ আনন্দে উদ্বেলিত ও উচ্ছসিত। প্রিয় নীড়ের বাসিন্দা হওয়ার আনন্দ যেন তাদের জীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিটি মুহুর্তের মাঝে তাদের হাসি-আনন্দে ফুঁটে ওঠে প্রিয় নীড়ের প্রিয় এই অঙ্গন। জীবনের গতিধারার পরিবর্তনের জন্য ঠিকানাবিহীন তৃতীয় লিঙ্গের এমানুষগুলো একটি স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পাওয়ায় তারা আজ আনন্দে আত্নহারা। কাজের ফাঁকে গান-বাজনা আর হাসি-আনন্দে মেতে থাকা তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দারা নিজ পায়ে দাঁড়াতে তাদের এই প্রিয় নীড়ে গরু,ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন করছেন। আবার অনেকে শাক-সবজি চাষও করছেন।

আজ রবিবার (২৭ নভেম্বর)সকালে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের হাটিকুমরুল গোলচত্ত্বরের পুর্ব-দক্ষিন পাশে স্বরস্বতী নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়,যেখানে ‘প্রিয় নীড়’ নামে যে,আশ্রয়ণ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের ৪০ সদস্যকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই জমির মালিকানাসহ পাকা ঘর,গবাদি পশু ও উপার্জনের জন্য সেলাই মেশিনও পেয়েছেন।
পুনর্বাসিত তৃতীয় লিঙ্গের জলি ও জুঁই এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে সবাই ভালো আছি। স্থায়ী ঠিকানা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে নতুন জীবন পেয়েছি । এখন জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখছি। নতুন জীবন পেতে সহায়তা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। মায়া নামের আরেকজন বলেন, আশ্রয়ণের ঘরে আসার পরও আশপাশের মানুষ প্রথমদিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো। তবে এখন বেশ ভালোভাবে কথা বলে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,ধারণা ছিল তৃতীয় লিঙ্গের ওরা হয়তো এখানকার সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করবে। সে ধারণা ভুল ছিল। তারা গ্রামের স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষও করে। এরা স্থানীয় কাউকে বিরক্ত করে না। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ওঠার পর প্রতিনিয়ত গান, হাসি-আনন্দে সময় পার করছেন তারা। কেউ গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন করছেন। কেউ শাক-সবজি চাষ করছেন।
প্রিয় নীড়ের নেত্রী মায়া এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে জানান, সরকারি হিসেবে আমাদের ৩০ সদস্যকে জমি ও ঘর দেওয়া হলেও বর্তমানে আমরা এ প্রিয় নীড়ে আছি মিলেমিশে ৪০ জন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন,তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য হলো তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে জীবনমান উন্নত করা।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসেন এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন,ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে তৃতীয় লিঙ্গের বসবাসকারীরা ভালো আছেন এবং তাদের ভালো রাখতে সরকারের সকল প্রকার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে জানান,প্রিয় নীড়ে আশ্রয় পাওয়ায় এখন অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা।