জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাইয়ে বিএনপি ও যুবদলের ১৮ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭০-৮০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
কালাই থানার এসআই আল-ইমরান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় যাঁদের সাক্ষী করা হয়েছে তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি, এটি ‘গায়েবি’ মামলা। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে লোক-সমাগম ঠেকাতে ও তাদের হয়রানি করতে এ মামলা করা হয়েছে। মামলা-হামলা করে রাজশাহীর সমাবেশে লোক-সমাগম ঠেকানো যাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তারা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৩ নভেম্বর রাতে কালাই থানার এসআই আল-ইমরান এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি খবর পান রাজশাহী ও ঢাকার সমাবেশ সফল করতে সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনায় উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে গোপন বৈঠক করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে রাত ১১টার দিকে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে লাঠিলার্জ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে বিএনপির কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ২টি ককটেল, ২১টি বাঁশের লাঠি ও ৭টি কাঠের বাটাম জব্দ করা হয়।
এজাহারে ‘পথচারী’ দেখিয়ে বোড়াই এলাকার আলী আকবর (৫০), কালাই পূর্ব পাড়ার ছানোয়ার হোসেন (৪২), কালাই বাজার এলাকার হেলাল উদ্দিন মোল্লা (৫৫), থুপসাড়া মহল্লার মামুনুর রশীদ (৪০) ও কালাই দোকানদারপাড়া মহল্লার আসাদুজ্জামান নয়নকে (৩৭) ওই মামলার সাক্ষী করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচজন সাক্ষীর সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে আলী আকবর আহাম্মেদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ছানোয়ার হোসেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, হেলাল উদ্দিন মোল্লা পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, মামুনুর রশীদ কালাই পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আসাদুজ্জামান নয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী ও কালাই পৌরসভার মেয়র রাবেয়া সুলতানার দেবর। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাক্ষীরা কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
কালাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার সোহেল বলেন, পুলিশ মামলাটি গোপন রেখেছিল। আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। মামলার এজাহারে যে তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দিন দলীয় কার্যালয়ে কোনো সভা হয়নি। এটি গায়েবি মামলা। রাজশাহীর সমাবেশে জনস্রোত ঠেকাতে আমাদের নামে গায়েবি মামলা দিয়েছে পুলিশ।
কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, কালাইয়ে বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁদের দলীয় কার্যালয় থেকে ককটেল, বাঁশের লাঠি ও কাঠের বাটাম জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সামছুল আলম বলেন, জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি ও কালাই থানায় তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো মামলা করা হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে এসব মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। যত মামলা-হামলাই করা হোক, বিভাগীয় সমাবেশের জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। তিনি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দেওয়ায় ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।