এম.দুলাল উদ্দিন আহমেদ,জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জঃ
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে অর্থের বিনিময়ে স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন উপহারের ঘর পেয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। অভিযোগ রয়েছে,ঘরপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একেএম শাহ আলম মোল্লা। ভূমি রেজিস্ট্রি বাবদও নিয়েছেন পাঁচ হাজার করে টাকা। এদিকে গৃহহীনদের উপহারের ঘরে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা থাকায় নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এ উপহারের ঘর যেন প্রকৃত গৃহহীনরা পায় সে বিষয়ে স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী পূর্বপাড়ায় ৩৫টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর বুঝে দেওয়া না হলেও বেশিরভাগ ঘর রয়েছে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের দখলে। একটি ঘর একাধিক ব্যক্তি বরাদ্দ পেয়েছেন। এরমধ্যে পাঁচটি ঘরে দুজন করে দাবিদার রয়েছেন। আবার কয়েকটি ঘরে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান,এখানে ১৭টি ঘর পেয়েছেন স্বচ্ছল ব্যক্তিরা। এদের মধ্যে রয়েছেন দুলাল হোসেন ও হাফিজুর রহমান নামের দুই ব্যক্তি। তাদের চরাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ বিঘা করে জমি ও নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। শুধু তাই নয়,হাফিজুর রহমানের নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে।
অন্য জেলা ও উপজেলার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা উপহারের এ ঘর পেয়েছেন বলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নাজমুল, ধুনটের শিল্পী খাতুন ও গোপালনগর এলাকার রত্না খাতুনসহ অন্য উপজেলার ছয়জন এ ঘর পেয়েছেন। স্থানীয় তিনজন কাঁচামাল ব্যবসায়ীও ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন। সোনামুখী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন শাহেনা খাতুন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার স্বামী হাসেম আলীর একটি মুরগির ফার্ম ছাড়াও এক বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। ওই ফার্মে তিনি কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে।
সোনামুখী পূর্বপাড়ার গৃহহীন ছোনেকা খাতুন অভিযোগ করে এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডট কমকে বলেন,তার নিজস্ব কোনো থাকার জায়গা নেই। তিনি সরকারি একটি ঘরের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অনেক অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তাকে ঘর দেওয়া হয়নি। অথচ যাদের থাকার জায়গা রয়েছে তারা ঘর পেয়েছেন।
কোহিনুর বেওয়া নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমরা টাকা দিতে পারিনি বলে ঘর পাইনি। আমরা টাকা পাবো কোথায়? আমরা তো অসহায়। সোনামুখী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেল্লাল হোসেন এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন,বাংলা ড্রেজার ব্যবসায়ী বাবু নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ঘরপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা লেনদেন করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। এলাকার অসহায় মানুষদের মূল্যায়ন না করে কাজিপুরের বাইরের কিছু মানুষকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’
চালিতাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল বারী জানান, তিনি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘খ’ শ্রেণির উপকারভোগী হিসেবে ঘর পেয়েছেন। এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘরে স্বপরিবারে বসবাসের ১০ দিনের মাথায় মেঝে ফেটে চৌচির হয়়ে যাওয়ায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দ্রুত মেরামত করে দিলেও দেওয়ালের পলেস্তারা হাতের স্পর্শে ঝরে পড়ছে। তিনি বলেন, এই ঘর বাবদ তিনি নগদ ৪২ হাজার ও মেঝেতে বালু ভরাট বাবদ তিন হাজার ৯০০ টাকা দিয়েছিলেন। তার পরিবারের একাধিক সদস্য শ্রমও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়,বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও ওয়্যারিং বাবদ তার তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ বিষয়ে চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, ‘উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতে জনপ্রতিনিধিদের মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তার নিজস্ব লোক দিয়ে এ তালিকা তৈরি করেছিলেন। ফলে টাকার বিনিময়ে সচ্ছল ব্যক্তিরা উপহারের ঘর পেয়েছেন। এটা দুঃখজনক।’
তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একেএম শাহ আলম মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন,গৃহহীনদের তালিকা এর আগের ইউএনও’র সময় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই করা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন সময় সেটা সংযোজন-বিয়োজন করায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। ঘর বরাদ্দের বিষয়ে কোনো লেনদেন হয়নি।
এ বিষয়ে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার এশিয়ান বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন,কাজটি আগের ইউএনওর সময় করা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন তদন্ত করা হয়েছে। তবে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।