মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমভাগ হতে গণতন্ত্রের সূচনা হলেও আধুনিক গণতন্ত্রের যে রূপ আমরা আজ দেখি সেটির ধারণা আমরা পাই আঠারো শতাব্দীর শুরুতে এসে। গণতন্ত্রের প্রাথমিক অবস্থা হতে আজকের আধুনিকতম রূপে আসতে গিয়ে গণতন্ত্রকে নানা রূপান্তরের মাঝে দিয়ে যেতে হয়েছে। গণতন্ত্রের ভবিষ্যত স্বরূপটি কল্পনা করতে হলে এবং এর সুফল পেতে হলে আমাদেরকে এই রূপান্তরগুলো এবং রূপান্তরের কারণগুলোকে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। এই লেখাটিতে আমরা গণতন্ত্রের সেই ক্রমবিকাশকেই দেখবো। প্রথমে আমরা দেখবো গণতন্ত্রের একদম শুরুর কথা যেটাকে আমরা বলবো গণতন্ত্রের প্রাথমিক রূপান্তর। সবশেষে থাকবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ রূপটি কেমন হতে পারে সেটি নিয়ে কিছু কথা।
গণতন্ত্রের প্রাথমিক রূপঃ সরাসরি গণতন্ত্র বা নগরকেন্দ্রিক গণতন্ত্র :-
খুব সহজ ভাষায় যদি বলা হয় – কিছু মানুষ সব সময়ই এমন ধারণা পোষণ করতো যে সকল মানুষ রাজনৈতিকভাবে সমান এবং সমষ্টিগত ভাবে নিজেরাই নিজেদের শাসন করার ক্ষমতা রাখে এবং শাসন যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা অথবা শাসনযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই থাকবে। এই ধারণার উৎপত্তি মূলত গ্রীক দেশে, এবং আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে এথেনিয়ানদের। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুর দিকে গ্রীসের কিছু ছোট ছোট নগর, যারা মূলত শাসিত হতো বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক শাসক, যেমন রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, স্বৈরশাসক কিংবা কতিপয়তন্ত্রের মাধ্যমে, তারা এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহন করলো যেখানে নাগরিকগণ নিজেরাই নিজেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় শাসনযন্ত্রও তারাই পরিচালনা করবে। সে জন্য তাঁদের নির্ধারিত সংসদ ছিল যেখানে নাগরিকগণ তাঁদের মতামত তুলে ধরবে এবং নিজের ভোট প্রদান করবে। এই ছিল গ্রীক সময়কার সহজ এবং সাধারন গণতন্ত্রের ধারণা যা আজকের আধুনিক গণতন্ত্রের মূলেও রয়েছে। এবার তাহলে দেখি গ্রীক গণতন্ত্রের রূপটি কেমন ছিল।
প্রাচীন গ্রীসের গণতান্ত্রিক ধারণার ছয়টি মূল উপাদান ছিলঃ
১। নাগরিকগণেরর মাঝে একরকম ঐক্য থাকবে যেন তারা নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এড়িয়ে সার্বিক ভালোর জন্য কাজ করতে পারে।
২। নাগরিকগণ হবে মানসিকগত, অর্থনৈতিকগত ভাবে বৈষম্যহীন।
৩। গণের আকার ছোট থাকবে অর্থাৎ গণতন্ত্র হবে নগরকেন্দ্রিক।
৪। গণতন্ত্রের ধরণ হবে সরাসরি (Direct democracy), অর্থাৎ প্রতিনিধিমূলক (Representative) নয়।
৫। প্রতিটি নাগরিককেই স্বল্প সময়ের জন্য হলেও শাসনযন্ত্রে অংশ গ্রহন করতে হবে।
৬। নগরটি হতে হবে স্বায়ত্বশাসিত।
যদিও আজকের মতো কোন প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব প্রাচীন গ্রিসে ছিল না, কিন্ত পারিবারিক কিংবা বন্ধুত্বের সম্পর্কের জোরে তখনো ক্ষমতার অপব্যবহার লক্ষ্য করা গিয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা ছিল যে উক্ত সময়ে গ্রীসের গণতন্ত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ ছিল না। নারী, দাস, শিশু এদেরকে এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বাহিরে রাখা হয়েছিল যার ফলে সকল নাগরিক রাজনৈতিক ভাবে সমান এই তত্ত্বটি এখানে সত্যিকারভাবে পালিত হয়নি। তাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হলেও ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিল শুধুমাত্র একশ্রেণীর নাগরিকদের মাঝে। দ্বিতীয় সমস্য ছিল যে সরাসরি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছোট ছোট নগরকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় কার্যকর, কিন্তু বেশ বড় নগর কিংবা পুরো দেশের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ততটা কার্যকর নয়। অনেক নাগরিকের সে ক্ষেত্রে সংসদে এসে নিজের মতামত তুলে ধরা সম্ভবপর হয় না।
এখন আসি গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা : – অর্ধশত বছর প্রায় হতে চলল আমাদের কষ্টার্জিত ও রক্তার্জিত স্বাধীনতার। এর মধ্যে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে অনেকবার। তবে সেই পরিবর্তনে তেমন কোনো ফায়দা হয়নি জনগণের। জনগণ যে তিমিরে ছিল সেখানেই আছে। কোথাও কোথাও হয়তো মিটমিট করে জ্বলে আলো। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটা সামান্য। গত ৫০ বছর বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছেন অনেকেই। বাইরের পোশাক এদের নানা রকম। কারো পরনে পাজামা, কারো মাথায় টুপি। কেউবা খাকি উর্দি। কেউ সুটেড-বুটেড।
কারো মাথায় ঘোমটা। এ সবই এদের বাইরের পোশাক। ভেতরে রঙ একই রকম। মূল লক্ষ্য আগেও যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। ক্ষমতা ধরে রাখা। কখনো গণতন্ত্রের নামে, কখনোবা দেশের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে। কখনো দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের প্রয়োজনে। কিন্তু এই ক্ষমতা কখনই অনুপ্রাণিত হয়নি বা পরিচালিত হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বা প্রত্যাশা অর্জনের লক্ষ্যে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে মানুষকে কানামাছি বানিয়ে চোখে রুমাল বেঁধে কানামাছি খেলায় মত্ত অধিকাংশ রাজনীতিবিদ।
এদের বলি জনপ্রতিনিধি। প্রকৃতপক্ষে এরা সবাই নিজ স্বার্থের প্রতিনিধি। এদের মধ্যে যে যখন ব্যতিক্রম ভুমিকা পালন করেছেন বা করেন, তারা আমাদের শ্রদ্ধেয়। ইতিহাসে তাদের সেই মহত্ত্বের স্বীকৃতি উচ্চশিখরে আছে এবং থাকবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইতিহাস গণতন্ত্র। দেশের রাজনীতির মূল স্তম্ভ। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত।
গণতন্ত্র ছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতা সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে সবশেষে যদি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়, মারামারি ও হিংসার মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্রের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপাদান গণতন্ত্র। আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাস পড়ি তাহলে দেখতে পাব অষ্টম শতাব্দীতে প্রথম বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রীতি শুরু হয়। বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার নীতি দিকে দেখি তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বাংলাদেশের রাজনীতির মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র।
যে দেশে জনগণ সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সেটিই হলো গণতন্ত্র। যে দেশে জনগণের নিয়ন্ত্রণ নেই সেটি ভোট হোক আর যাই হোক সেটিকে প্রকৃত নির্বাচন বলা চলে না এবং এদিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের দেশে গণতন্ত্র গড়ার প্রয়োজন রয়েছে।
এশিয়া, আফ্রিকা এবং তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কঠোর সমালোচক, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট প্যাকেনহ্যামের ( Robert Packenham ) অভিমত প্রায় একই রূপ । তার মতে, তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অদূর ভবিষ্যতে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ মোটেই উজ্জ্বল নয় । ( The chances for liberal democracy in most Third World countries in the foreseeable future are not very great ; ) তিনি বলেন, আমেরিকার জন্য তৃতীয় বিশ্বের সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ একদিকে যেমন অপ্রয়োগযোগ্য এবং অবাস্তব, অন্য দিকে থেকে কুলভিত্তিক বলেও তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিত । ওই সব দেশে নির্বাচন ছাড়াও রয়েছে ক্ষমতায় যাওয়ার বিকল্প পথ ।
এমন কী গণতন্ত্রের সংজ্ঞাও তাদের কাছে ভিন্ন । শুধু তৃতীয় বিশ্বে কেন, অ্যাংলো – আমেরিকান সমাজ – ক্ষেত্রে ছাড়া, ইউরোপের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশেও গণতন্ত্রের সম্ভবনা সম্পর্কে কোনো কোনো লেখক গভীর সন্দেহ পোষণ করেছেন । ১৯৪৩ সালে ( Foreign Affairs ) পত্রিকায় ওয়াল্ডু ফ্রান্ক ( Waldo Frank ) জার্মানিতে হিটলারের উত্থান সম্পর্কে মন্তব্য করে লিখেছিলেন : ; পশ্চিম ইউরোপে গণতন্ত্রের ধর্ম ( Religion of democracy ) শৈশব থেকে পালিত হয়েছে অতিযত্নে ।
আজ তা আত্নরক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত । সমগ্র মহাদেশের অস্তিত্ব আজ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে । হিটলারের পতন হলেও এ অনিশ্চয়তা দূর হবে বলে মনে হয় না । কারণ আধুনিক ইউরোপীয় চিন্তা – ভাবনা এবং শিল্পসমৃদ্ধ পাশ্চাত্যের মানসে গভীরভাবে প্রোথিত যে অগণতান্ত্রিক শক্তির প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ফ্যাসিবাদ এরই ফলশ্রুতি বলে মনে হয় ।
( “ The threat will outlast Hitler, since fascism itself is a mere end product of deep – grained anti – democratic force’s within the very texture of modern European thought and of the whole industrial West ‘; ) । শুধু কী তাই ? ইতালিতে ফ্যাসিবাদের প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করে ফ্রাণ্কের এক দশক আগে ব্রিটেনের খ্যাতনামা ঐতিহাসিক আনল্ড টয়েনবি ( Arnold Toynbee ‘;) বলেন : ; ইতালিতে ফ্যাসিবাদের প্রভাব দেখে কোনো সংসদ সদস্য আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না । ইতালির গণতন্ত্র বর্জনে এ প্রশ্ন আজ চারদিকে উচ্চারিত । রাজনৈতিক এ চারা তার নিজস্ব ভূমি ছাড়া অন্যত্র স্থায়ী শিকড় গজাতে পারবে কী ??
ইতিহাস কখনো অস্বস্তিকর শিক্ষণীয় বিষয়ের সামনেও হাজির করে—যেমন কোনো শাসনব্যবস্থাই চিরন্তন নয় বা গণতন্ত্রও কখনো স্বৈরতন্ত্রের রূপ ধারণ করতে পারে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবক্ষয় যত বাড়ে, সামাজিক বিধির অবিহিত প্রয়োগ যত বাড়ে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আচরণ তত আকর্ষণহীন ও সংগতিহীন হতে থাকে।
উদারপন্থীদের মধ্যে একটা অনড় লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তারা মনে করছে, গণতন্ত্র সংকটগ্রস্ত। উদারপন্থীদের যে অভিযোগ শোনা যায়, তার ব্যাখ্যা শুধু এই-ই নয় যে তারা হারছে বলেই অভিযোগ তুলছে। যারা জয়ী হচ্ছে, তারাও বলছে যে তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার (লিবারেল ডেমোক্রেসি) শিকার। গণতন্ত্র সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে তখনই, যখন এ ব্যবস্থাকে আমরা তর্ক-বিতর্কের উপযোগী রাখি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা আধুনিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে চারটি অপরিহার্য উপাদানের কথা উল্লেখ করেন। এক. সুনির্দিষ্ট ভূ-ভাগ, দুই. ওই ভূ-ভাগের জনসমষ্টি, তিন. ওই ভূ-ভাগে ওই জনসমষ্টির সরকার এবং চার. ওই ভূ-ভাগ ও ওই জনসমষ্টির সব ব্যাপারে ওই জনসমষ্টির সার্বভৌমত্ব। স্বাভাবিক অবস্থায় আধুনিক রাষ্ট্রের সরকার গঠিত হয় রাজনৈতিক দল দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে আর জনগণের সার্বভৌমত্ব অনুশীলিত হয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দলও আধুনিক রাষ্ট্রের আরেকটি অপরিহার্য উপাদান।
বর্তমানে দুনিয়াব্যাপী যে অবস্থা চলছে, তাতে দলভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সরকার দ্বারা অধিকতর কল্যাণকর সর্বজনীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সে ধারায় গভীরতর রাষ্ট্রচিন্তা দরকার। এ যুগে উদার গণতন্ত্র হলো ধনিক-বণিক ও সাম্রাজ্যবাদের লেজুড়বৃত্তিকারীদের গণতন্ত্র। আমরা চাই সর্বজনীন গণতন্ত্র।
এ প্রেক্ষাপটে বলা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কাঠামো তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু সেই কাঠামোর প্রাণের স্পন্দন এখনো শুরু হয়নি । ইঙ্গ – মার্কিন সামাজিক ক্ষেত্রে যে সৃজনশীল প্রত্যয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে রাষ্ট্র – ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে শুধুমাত্র ন্যস্ত ক্ষমতা অথবা জনগণের আমানত হিসেবে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশ তা অনুপস্থিত । কিন্তু জনগণের সংগ্রামী চেতনা রাজনৈতিক নেতাদের তা গ্রহণে বাধ্য করবে বলে মনে হয় তাদের আন্দোলনের স্পৃহা এবং ত্যাগ স্বীকারের মন – মানসিকতা অনুধাবনে ।
পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য বরাবর উপদেশ দিয়েছেন জনগণকে তাদের দাবি ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে । বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমাদের উপদেশ হলো গণতন্ত্রকে অর্থপূর্ণ করতে হলে অপরিহার্য যেমন জনগণের সচেতনতা, তেমনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের শক্তিশালী অঙ্গীকার ( Commitment ) এবং শাসন প্রশাসনে সামন্তবাদী মনের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক চিন্তা – চেতনা । সামন্তবাদী মন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা এক সাথে চলে না ।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল । স্বৈরাচারের আঘাতে মুচড়ে গেছে, কিন্তু নি: শেষ হয়নি । দেহ তার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, কিন্তু অন্তরাত্মা রয়েছে অক্ষত । কেউ কেউ বলেন, ক্ষেত্র প্রস্তুত না হলে গণতন্ত্রের সোনালী ফসলে সমাজ সমৃদ্ধ হবে না । সত্যি বটে, গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্য চাই এক উর্বরক্ষেত্র , গণতান্ত্রিক কৃষ্টির ব্যাপক চর্চায় সিক্তক্ষেত্র ।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সাজগোজ সম্পন্ন করে গণতন্ত্রের অপেক্ষায় থাকার প্রয়োজন নেই। যা প্রয়োজন, তা হলো গণতন্ত্রকে সঙ্গী করেই পথচলা আর চলতে চলতে গণতন্ত্রের জন্য সুসজ্জিত হওয়া । যেসব জনপদ গণতন্ত্রকে অর্থপূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে, তারা এভাবেই অগ্রসর হয়েছে ।
লেখক:- ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক বাংলা পোস্ট |√| ও বাংলাদেশ জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশক |√|