শাহ্ আলম শাহী,দিনাজপুর থেকেঃ দিনাজপুরে চলতি মৌসুমে
ভালো হয়েছে,ঐতিহ্যবাহী ‘শিটি মরিচ’এর। বিভিন্ন স্থান থেকে
পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকেই ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন মরিচ। মরিচের
দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষক।বিলুপ্তপ্রায় এ মরিচ নতুনভা্েধসঢ়;ব চাষ করে
এবার ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা।
দিগন্ত বিস্তৃত ক্ষেতের পুরো প্রান্তরজুড়ে গাঢ় সবুজের মধ্যে
টকটকে লাল রঙের সমারোহ।থোকা থোকা মরিচ।
দৃষ্টি নন্দিত এ মরিচের স্থানীয় নাম “বিরলের শিটি মরিচ।” শুধু
দেখতেই সুন্দর নয়, এর ঝালের খ্যাতিও রয়েছে। নাম শুনলেই বোঝা যায়
এর গুরুত্ব। ঝাল সমৃদ্ধ শিটি মরিচ দেখতে চিকন ও লম্বা ধরনের। স্বাদ,
রং ও সৌন্দর্যে দেশের যেকোনো এলাকার মরিচের মধ্যে এটি অনন্য।
প্রায় দেড়শত বছর ধরে বিরলের সবর্ত্র শিটি মরিচের আবাদ হলেও সময়ের
বির্বতনে এ মরিচের চাষ বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু,এ মরিচ নতুনভা্েধসঢ়;ব
চাষ করে এবার ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা।
প্রায় দেড়শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য এ শিটি মরিচের চাষ ধরে
রাখতে জগতপুর,বিষ্ণুপুর,রানীপুকুর, মির্জাপুর,কুকড়িবন ও
কামদেবপুরসহ বিরল উপজেলার অসংখ্য বৃষক আবারো নতুন করে ব্যস্ত
হয়ে পড়েছেন। মরিচ ক্ষেতের পরিচর্যা,মরিচ তোলা ও বিক্রি নিয়ে
এখন সময় কাটাচ্ছেন এসব গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষক।
বিরল উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ দিকে পাকা রাস্তাটি’র তিন
কিলোমিটার পর দুই দিকেই দিগন্ত বিস্তৃত মরিচের ক্ষেত।বিভিন্ন
স্থান থেকে পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকেই ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন
মরিচ। কৃষক মরিচের দামও পাচ্ছেন ভালো।ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে খালি
জমিতে কাঁচা-পাকা মরিচ স্তুপ করে রেখেছেন কৃষকেরা। পাইকারি
ক্রেতারা পাল্লায় ওজন করে বস্তজাত করছেন।
মরিচ চাষী আশরাফ আলী জানালেন, তিনি ৪৮ শতক জমিতে শিটি
মরিচ চাষ করেছেন। এ জন্য প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুুই
দফায় ৩৫ মণ কাঁচা মরিচ তুলে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এর
পরও জমিতে প্রায় ১০ মণ কাঁচা-পাকা মরিচ আছে।
এলাকার আদর্শ কৃষক মতিয়ার রহমান মতে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে
জমি থেকে বোরো ধান তোলার পর উঁচু ডাঙ্গা জমিতে শিটি
মরিচের চাষ করা হয়। শ্রাবণ মাসে বীজ তৈরির কাজ শুরু হয়। ভাদ্র-
আশ্বিন মাসে চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের দুই মাসের মধ্যে
শুরু হয় মরিচ তোলা। নিবিড় পরিচর্যার পর পৌষ মাসের ১৫ দিনের
মধ্যে মরিচ তুলতে পারে কৃষকরা। প্রতি মৌসুমে ফলন্ত মরিচের ক্ষেত
থেকে ৩ বার মরিচ সংগ্রহ করা যায়। শতক প্রতি ১ মণেরও অধিক
মরিচ পাওয়া যায়।মাঘ মাসে মরিচ পেকে লাল হয়ে যায়।
রানীপুকুর ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আযম জানালেন, বাপ-
দাদাদের আমল থেকে এলাকার কৃষকেরা মরিচের চাষ করেন। মরিচই
এলাকার কৃষকদের প্রধান ফসল।
সিটি মরিচের চাষ বিষয়ে আরো জানান, বীজ সংরক্ষণের জন্য ক্ষেতের
পাকা মরিচ (টোপা) সংরক্ষণ করা হয়। টোপা রোদে শুকিয়ে ড্রামের
মধ্যে রেখে বীজ সংরক্ষণ করা হয়। বপনের মৌসুমে প্রতি কেজি বীজ
৪ থেকে ৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
কামদেপুর গ্রামের মরিচ চাষী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমি ২
বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি চাষ
করতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি এবার
আমি ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবো।’
কৃষক মহসীন আলী কৃষকরা জানান, সিটি মরিচ চাষে এবার রোগ-
বালাই তেমন একটা না হলেও প্রচন্ড শীতের কারণে গোঁড়া পঁচা
রোগ হয়েছিল। তারপরেও ফলন ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাওয়া
যাচ্ছে।
শিটি মরিচের সাথে সাথী ফসল হিসেবে মরিচের পাশাপাশী মুলা,
ডাটা, বেগুন, পিয়াজ, পালন শাক আবাদ করছেন অনেকে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তরের উপ-পরিচালক বৃষিবিদ মো,
নুরুজ্জামান জানান,শিটি মরিচের শুধু ঝালই বেশি নয়,এর বৈশিষ্ট্যও
রয়েছে অনেক। এটি লম্বায় ৬-৭ ইঞ্চি হয়। একবার গাছ লাগালে ৩
থেকে ৪ বার ফসল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি শতকে ১ দশমিক ২৫ মণের
অধিক ফলন হয়। হেক্টর প্রতি পাওয়া যায় ১২ টনের অধিক ফলন ।
৫৮ হেক্টর জমিতে “বিরলের শিটি মরিচ”সহ দিনাজপুরে দুই’শ ১২
হেক্টর জমিতে এবার মশলাজাতীয় ফসল মরিচ চাষ হয়েছে। রোগ-বালাই
তেমন একটা আক্রোমন না করায় এবার মরিচের ভালো ফলন হয়েছে।
ধানের জেলা দিনাজপুরে এ মরিচ চাষে ধুম পড়েছে। এ মরিচ চাষ
ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের
সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং এ মরিচের ভালো দাম পেলে এ অঞ্চলে
মরিচ চাষের পরিধি আরো বেড়ে যাবে এমনটাই মন্তব্য
করছেন,কৃষিবিরা।