এম.দুলাল উদ্দিন আহমেদ,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জে নতুন ইট উৎপাদন নিয়ে বিপাকে পড়ছেন ইটভাটা মালিকরা। আমদানি বন্ধ থাকায় জ্বালানি (কয়লা) সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করতে পারছেন না তারা। নতুন ইট উৎপাদন না হওয়ায় মজুত ইটের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বেসরকারি আবাসন খাতসহ সরকারি উন্নয়ন কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। জেলায় ইট পোড়ানোর মৌসুমে কয়লা কিনতে না পেরে সিংহভাগ ইটভাটার মালিকরা এখনও আগুন দিতে পারেনি। ভাটা মালিকদের দাবি স্বল্প পরিসরে কয়লা আমদানি শুরু হলেও কয়লা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে মেট্রিক টন প্রতি কয়লার দাম বেড়ে তিনগুণ পর্যন্ত হয়েছে। বর্তমানে এক মেট্রিক টন কয়লা ক্রয় করে ভাটা পর্যন্ত নিয়ে আসতে খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার টাকার উপরে। এ অবস্থায় ইটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন ইট ভাটা মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। সিরাজগঞ্জ সদরসহ ৯টি উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৪১টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ১২৬টি সচল থাকলেও কয়লার অভাবে ইটকাটা বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সলঙ্গা থানার সাতটিকরী তালতলা বন্ধু ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়,ভাটা জুড়ে শ্রমিকরা কাঁচা ইট তৈরিতে ব্যস্ত। সারি সারি কাঁচা ইট শুকিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কয়লার উচ্চমূল্যের কারণে ইট পোড়ানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে জানা যায়, গত বছরের ইট এরইমধ্যে বিক্রি প্রায় শেষ। কিন্তু নতুন করে উৎপাদনে না যাওয়ায় জেলাজুড়ে ইটের বেশ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি উন্নয়ন কাজে ঠিকাদাররা ইট কিনে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর নতুন ইট উৎপাদনের পর যে দামে বিক্রি হবে, তা বর্তমান বাজার দরের দ্বিগুণ।
ভাটা সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত ইট উৎপাদনে যাওয়ার সময় সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়েই মাটি কেনা, মাটি থেকে কাঁচা ইট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। কাঁচা ইট রোদে শুকিয়ে অক্টোবর মাসেই প্রথম কিস্তি ইট পোড়ানো শুরু করেন। কিন্তু এবার নভেম্বর মাস শুরুর পরও ইট উৎপাদন শুরু করা যায়নি। রায়গঞ্জ উপজেলার এসআর ব্রিকসের মালিক মোছা. মীনা খাতুন জানান, কয়লার অভাবে এই মৌসুমে তিনি এখনও তার ভাটাতে আগুন দিতে পারেনি। কবে নাগাদ আগুন দিতে পারবেন সেটাও তিনি বলতে পারছেন না। অথচ জীবনের অর্জিত সকল সম্পদ ইটভাটায় বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
এনএম ব্রিকসের মালিক শাহ আলম বলেন, তিনি ব্যাংক ঋণ ও আত্নীয় স্বজনদের নিকট থেকে সহযোগীতা নিয়ে ইটভাটা করেছেন। কিন্তু কয়লার চরম সংকটে ভাটায় আগুন দিতে পারছেন না তিনি। এলআর ব্রিকসের মালিক ফারুক হোসেন জানান, প্রতি রাউন্ডে ৭ থেকে ৮ লাখ ইট পোড়ানো হয়। এতে প্রায় ১৩০ টন কয়লা লাগে। তাতে ৮ রাউন্ড পোড়ালে ১ হাজার টনের বেশি কয়লা প্রয়োজন হয়। ১ হাজার টন কয়লার দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টাকা। সেই কয়লা এবার কিনতে হবে তিন কোটি টাকার ও বেশি দিয়ে। আবার টাকা হলেই কয়লা মিলছে না। সিরাজগঞ্জ এ্যালবাট হাউজিং প্রকল্পের ম্যানেজার হুমায়ন কবির সোহাগ বলেন, ইটের মূল্য বৃদ্ধিতে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। ফলে ফ্ল্যাটের মূল্য গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে হাউজিং প্রকল্প গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন শোভন সরকার এশিয়ান নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,ঘন্টায় ঘন্টায় কয়লার দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে ইট ভাটা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া মালিকদের কাছে আর কোন পথ খোলা নেই। ইট ভাটা শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছে গেছে। দ্রুত সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে কয়লার দাম কমিয়ে এই শিল্পকে বাঁচানো জরুরি।
রায়গঞ্জ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সদস্য আইয়ুব আলী বিএসসি জানান,জেলায় প্রায় ১৩০টি ইটভাটা চালু রয়েছে। যেখানে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। কয়লার সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠতে না পারলে মালিক পক্ষ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।