জয়পুরহাট প্রতিনিধি
আবহমানকাল থেকে বিয়ে একটি সামাজিক প্রথা। এর মাধ্যমেই নব দম্পতিরা প্রবেশ করে নতুন জীবনে। আর এ উপলক্ষে চলে ধুমধাম করে মেহেদি, গায়ে হলুদ, বৌভাতের আয়োজন। থাকে ভুড়ি ভোজের আয়োজন। চলে অথিথি আপ্যায়নের ধুম। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিতিদের পাশাপাশি এতিম শিশুদের দাওয়াত দিয়ে এক ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও তার পরিবার। বিয়ের অতিথিদের পাশাপাশি এতিম শিশুদেরকে একবেলা পেট ভরে খাওয়ালেন কনের পরিবার। ঘটনাটি জয়পুরহাট পৌরশহরে গুলশান মোড় এলাকার একটি বিয়ের। এদিকে ব্যতিক্রমী এই বিয়ের আয়োজনে এলাকাবাসী বেশ খুশি। ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে ভাইরাল হয়েছে এই আয়োজনে। অনেকেই প্রশংসা করছেন তাদের এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে।
গুলশান মোড় পাড়ার মো. ইমরান হোসেন মণ্ডলের মেয়ে এ রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী শামীমা নাসরিন এ্যানি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা ও মেরিন অফিসার মো. তাহমিদ রহমামের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। কনের স্বপ্ন ছিল তার বিয়ে যার সঙ্গেই হোক না কেন, সে তার বিয়েতে এতিমখানার শিশুদের খাওয়াবেন। এ্যানির সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ধূমধাম আয়োজনে বিয়ে হয়েছে তার। বিয়েতে আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের মত একই খাবারের মেনু ছিলো এতিম শিশুদের জন্যও। এতে এতিম শিশুরা যেমন খুশি, তেমনই খুশি এ্যানির পরিবার ও তার নতুন শ্বশুর বাড়ির লোকজনও।
এ্যানি বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম আমার বিয়েতে আমি এতিম শিশুদের দাওয়াত দিবো। আমরা সবাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ আয়োজন করি তার সঙ্গে এই আয়োজন করতে বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তার সামান্য অর্থ দিয়ে যদি না খেতে পাওয়া শিশুদের পেট ভরে, তবে সেটাই আসল স্বার্থকতা। তাতে করে এতিম শিশুরা একটু ভালো খেতে পারলো এবং খুশিও হলো। আমার এই স্বপ্ন পূরণ করছে আমার পরিবার। আমি খুব খুশি।
এ্যানির বড় ভাই সাজেদুর রহমান সুমন বলেন, ছোট বোনের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমরাও অনেক খুশি।চেয়েছিলাম রেস্টুরেন্টে দাওয়াতি অতিথিদের সঙ্গে ওদেরকেও খাওয়াতে কিন্তু পরিবহন ও সড়কের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের এখানে আনা হয়নি। একই খাবার তাদের এতিম খানার আবাসিক হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পেট পুরে খেয়েছে বাচ্চাগুলো।
এ্যানির স্বামী মেরিন অফিসার মো. তাহমিদ রহমান বলেন, যখন শুনেছি আমার স্ত্রী এতিমদের দাওয়াত দিয়েছে, তখন খুব খুশি হয়েছি। কারণ এই যুগে মেয়েরা বিয়েতে নিজের আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত থাকে কিন্তু বিয়ে নিয়ে তার চিন্তাটাই আলাদা। আমি অনেক খুশি এই রকম শ্বশুর বাড়ি পেয়ে। আমাদের জন্য দোয়া চাই, আমরা যেনো সুখে শান্তিতে থাকতে পারি।
সিদ্দিকীয়া কোরবানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা এতিমখানার শিশুরা বলেন, আমরা যেদিন ওই আপুর বিয়েতে দাওয়াত পেয়েছি সেদিন থেকেই আমরা খুশি। বিভিন্ন রকমের ভালো খাবার খেয়েছি আমরা। সবাই তাদের জন্য দোয়া করেছি, আল্লাহ তা’আলা আপুদেরকে সুখে রাখুক।
এলাকাবাসী হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের পাড়ার মেয়ে এ্যানি এবং তার পরিবার অনেক ভালো। তারা বিয়েতে যে এতিম শিশুদের জন্য খাওয়ার আয়োজন করেছে, এটা দেখে আমরা খুশি হয়েছি। তাদের থেকে শিখলাম যে, এতিম বাচ্চাদের খাওয়ানোর মধ্যেও অন্য রকমের ভালোলাগা বা শান্তি আছে।
বিয়েতে ভিন্ন রকমের আয়োজন দেখে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওলিউজ্জামান বাপ্পি বলেন, আমার ওয়ার্ডে এমন ভিন্ন আমেজেত বিয়ের আয়োজন হওয়াতে খুশি হয়েছি। শুধু বিয়েতে না, বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানে সুবিধা বঞ্চিত অসহায় দরিদ্র ও এতিম শিশুদের খাওয়ানো ও সাহায্য করতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। আর এই পরিবারের লোকজন এই রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।