সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ওলি আউলিয়ার পুণ্যভুমি নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম এর ভারে ডুবে যাচ্ছে নামধন্য কলেজটি। কিন্তু তা রক্ষার জন্য নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা। ১৯৯৮ সালে প্রভাষক হিসেবে ওই কলেজে যোগদান করেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম। উচ্চ শিক্ষা প্রদানের ব্রত নিয়ে চলনবিলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নওগাঁয় ১৯৯৫ সালের স্থাপিত জিন্দানী কলেজটি ১৯৯৯ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। তবে ১১ অক্টোবর ২১ কলেজের অধ্যক্ষের পদটি শূন্য হলে বিধি মোতাবেক সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাড.নূরুল ইসলাম নিয়ম বর্হিভুতভাবে আব্দুর রহিমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চলতে থাকে পরস্পরের যোগসাজসে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। সে অনিয়ম ও দুর্নীতির ধারাবাহিকতায় সম্প্রতিক সময়ে কলেজ ফান্ডের অর্থ ইচ্ছামতো ব্যয়,নিয়োগ বাণিজের পাঁয়তারা,শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা না বাড়ানোসহ তাদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আব্দুর রহিম এর বিরুদ্ধে। এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আব্দুর রহিমের মেয়াদ ৬ মাসে পেরিয়ে বছরের মাথায় এসে গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাড.নূরুল ইসলামের যোগসাজশে ল্যাব সহকারী উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞান পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা নিজ প্রতিষ্ঠানে নেওয়ার বিধান থাকলেও তা না করে অধ্যক্ষ ও সভাপতি কর্তৃক অতি গোপনীয়ভাবে গত ৪ নভেম্বর২২ সিরাজগঞ্জ সরকারি ইসলামিয়া কলেজে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করার পায়তারা করা হয়। পরে নিয়োগের গোপন বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে গত ৩১ অক্টোবর তিনজন অভিভাবক সদস্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৪ নভেম্বর সে পরীক্ষাটি স্থগিত হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরির শর্তাবলি রেজুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ ধারা-৪ এর ২(র) অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে করতে হবে কিন্তু তা মানা হয়নি কলেজটিতে।
অভিভাবক সদস্য আকবর আলী,শহিদুল ইসলাম ও শেখ ফিরোজ অভিযোগ করে জানান,গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজটিকে তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন কলেজ মনে করে কলেজের ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক ও অন্যান্য সদস্যদের মতামতের তোয়াক্কা এবং রেজুলেশনের কোরাম পূরণ না করে এক তরফাভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ পরীক্ষার দিনক্ষণ ধার্য্য করে। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়। এর আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কাশেম থাকা অবস্থায় অ্যাড. নূরুল ইসলাম চারটি নিয়োগে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করেছিল। তখনও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মেয়াদ ৬ মাস পেরিয়ে এক বছর হয়ে ছিল।
নাম প্রকাশ না শর্তে সরকার দলীয় কয়েক জন নেতা অভিযোগ করে বলেন, অ্যাড.নূরুল ইসলাম গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার পর থেকেই জিন্দানী কলেজকে টাকা বানানোর যন্ত্রে পরিনত করেছেন। গত বছর চারটি নিয়োগে তিনি প্রায় ৮৫ লাখ টাকা পকেটে ভরেছেন। এ ছাড়াও কলেজের গাছ কাটা হয়েছে অবৈধভাবে। প্রশাসন তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে বলে তারা এব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম জানান,মিটিংয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ পরীক্ষার দিন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনজন অভিভাবক সদস্য সেই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল না। পরে তারা অভিযোগ দেয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে।
কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাড. নূরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিয়োগ বিষয়ে ফোনে কথা বলতে আপত্তি পোষণ করেন,ফলে এবিষয়ে তার কোন প্রতিক্রিয়া জানাযায়নি।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল করিম বলেন,জেলা প্রশাসক বরাবর এক পক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলেজের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সেই সাথে সরেজমিন তদন্ত করে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। সে মোতাবেক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।#