ডেস্ক রিপোর্ট; ফরিদপুরে ধর্মঘট উপেক্ষা করেই বিএনপির সমাবেশে বাড়ছে উপস্থিতি, গত ১২ অক্টোবরে চট্টগ্রামে গণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক কর্মসূচী শুরু করেছে বিএনপি। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে এবং ৫ নভেম্বর বরিশালে বিভাগীয় গণ সমাবেশ করে দলটি।
আগামীকাল ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগীয় গণ সমাবেশ। সমাবেশের দুইদিন আগেই ফরিদপুর শহর থেকে ৫কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে জড়ো হতে শুরু করেছে মানুষ।
বিএনপি বলছে, ইতিমধ্যে তাদের ৫টি বিভাগীয় গণ সমাবেশে নানা বাধা ও পরিবহণ ধর্মঘট উপেক্ষা করেও লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছে। যতই বাধা দেওয়া হচ্ছে ততই মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে সমাবেশ।
বিএনপি নেতারা বলছে, চট্টগ্রামে সমাবেশে পথে পথে সরকার দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা কম বাধার সম্মুখীন হলেও ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর সমাবেশের আগের দিন থেকে বন্ধ রাখা হয় গণপরিবহণ। সমাবেশে যাওয়ার পথে বাধা বিপত্তি, হামলার শিকার হন নেতাকর্মীরা।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সমাবেশের দুইদিন আগেই গণপরিবহণ বন্ধ, পুলিশি গ্রেফতার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার মুখেও পিছু হটেনি বিএনপি নেতাকর্মীরা। সকল বাধা উপেক্ষা করেই সমাবেশ সফল করতে হাজির হন তারা।
বিএনপির অভিযোগ সমাবেশ বিঘ্ন ঘটাতে সবধরনের বাধা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবুও তাদের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার, হামলা-মামলার ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সমাবেশে জড়ো হয়েছেন। সরকার যতই কৌশলী হয় না কেন বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে না আর।
ইতিপূর্বে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে পরিবহন ধর্মঘট ডাক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির গণ সমাবেশকে কেন্দ্র ধর্মঘটের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে এর সঙ্গে সরকার বা আওয়ামী লীগ জড়িত নয়।
মালিক ও শ্রমিকেরা বলছে, মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ইজিবাইক ও বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ এবং ভাড়ায় মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রেখেছে তারা। তাদের এমন দাবি মানতে নারাজ বিএনপি। বিএনপির অভিযোগ, তাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার বলপুর্বক মালিক শ্রমিকদের পরিবহন বন্ধ রাখতে বাধ্য করছে।
এদিকে, বিএনপির সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া ও পরিবহণ ধর্মঘট প্রসঙ্গে সম্প্রতি মন্ত্রনালয়ে নিজ কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির সভা-সমাবেশ করা নিয়ে আমরা কোনো বাধা দিচ্ছি না। যেখানে খুশি সেখানেই সমাবেশ করছে। এখন বাস আসবে কি আসবে না, সেটা নিয়ন্ত্রণ করে বাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক সমিতি।
বিএনপি নেতারা বলছে, যেখানে তাদের সমাবেশ শুধু কি সেই অঞ্চলের সড়ক মহাসড়কে নছিমন-করিমন চলে? নাকি সারাদেশেও চলে? যদি এসব দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে থাকে তাহলে সারাদেশে দিবে। শুধু যেখানেই বিএনপির সমাবেশ সেখানেই বাস ধর্মঘট দিবে!
এদিকে, আগামীকাল ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে গণ সমাবেশের এক দিন আগেই ফরিদপুর জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে ৩৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট ডাক দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি জুবায়ের জাকির বলেন, এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোন সম্পর্ক নেই। গত মাসে মাদারীপুরে আমাদের দক্ষিণ বঙ্গের পরিবহণ শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর সাথে বিএনপির সমাবেশের তারিখ মিলে গেলে আমাদের কি করার আছে?
বিএনপির দাবি, বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতেই এই অপকৌশল নেওয়া হয়েছে। এর আগে একই কায়দায় অন্যান্য স্থানেও পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ফরিদপুর গণ সমাবেশের সমন্বয়কারী শামা ওবায়েদ বলেন, পরিবহন ধর্মঘট সরাসরি ডাকুক কিংবা পরোক্ষভাবে ডাকুক গত পাঁচটি সমাবেশে আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমাদের সমাবেশের আগে ও সমাবেশের দিন তারা বাস বন্ধ করে দেবে। সব জায়গায় তা করেছে। জনগণের ভোগান্তি তাদের মাথায় নেই, তাদের চিন্তা বিএনপিকে বিপাকে ফেলানো। কিন্তু এতে কোন কাজ হবে না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ইজিবাইক ও ভাড়ায় মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বন্ধের অযুহাতে পরিবহন ধর্মঘট ডাক দিয়েছে, এটা একটা হাস্যকর ঘটনা। যতই বাধা দিয়ে থাকুক না কেন, বিএনপির এই গণজোয়ার বন্ধ করতে পারবে না।