মঈন উদ্দীন: ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভর থেকে স্বনির্ভরতা অর্জনে রাজশাহীতে তিন বছরের বিশেষায়িত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই পরিকল্পনায় বছরের ব্যবধানে সরিষা আবাদে যুক্ত হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমি। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা। স্বল্প সময়ে লাভজনক এই আবাদে চাষিদের সুদিন ফিরবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহীতে আমন ও বোরো ধান চাষের মাঝামাঝিতে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পহেলা নভেম্বর থেকে পুরোদমে রাজশাহীতে সরিষা রোপন শুরু হবে। তবে আমন কেটে এরইমধ্যে অনেকে সরিষা রোপন করছেন। ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনাকে সামনে রেখে সরিষা বীজের সংরক্ষণও বাড়ানো হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে কৃষকরাও সরিষার সর্বোচ্চ দামও পাচ্ছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ২৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৩৬ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন। যেটা ত্রি-বার্ষিক বিশেষায়িত পরিকল্পনায় এই মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে ১৫ হাজার ৩০০ হেক্টর বেশি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন। যেটা সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষি দপ্তরের নেয়া বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ আবাদ পরিকল্পনা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভর। দেশীয় উৎপাদন মোট চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে ভোজ্যতেল নিয়ে তেলবাজির চিত্র সবার জানা। যেটা নিয়ে সরকারও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে। একারণে তেলের দেশীয় উৎপাদন মোট চাহিদার অন্তত ৪০ শতাংশ পূরণে কৃষি দপ্তরের বিশেষায়িত ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সরিষার বর্তমান বাজার পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ কাঁচা সরিষা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে জেলায় শুকনো সরিষা সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে সরিষার বীজ এবার বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে।
রাজশাহীতে সাধারণত ৭টি জাতের উচ্চফলনশীল সরিষা আবাদ করে থাকেন চাষীরা। এগুলো হলো- বিনা সরিষা ৪, ৯ ও ১০ এবং (উফশি) জাতের বারি সরিষা- ১৪, ১৫, ১৭ ও ১৮।
পবা উপজেলার কৃষক ইয়াকুব জানান, তিনি দেড় বিঘামতো জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলেন। পরিবারের চাহিদা পূরণ করে কিছু বিক্রি করেছিলেন কাঁচা অবস্থায়। এক মাস আগেই তিনি সরিষা সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। বীজের সরিষার দাম ৪ হাজার টাকার উপরে। আগে সরিষার দাম এতো টা হয় নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, স্থানীয়ভাবে তেলের চাহিদা ৪০ শতাংশ পূরণে সারাদেশব্যাপি কৃষি দপ্তরের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাজশাহীতে এটা শুরু হয়েছে। যেখানে কৃষকদের বিভিন্নভাগে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করা হচ্ছে।