জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের নওদা গ্রামের নাজমা বেগম ও পারুল বেগম নামের দুই গৃহবধূ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের বাড়ীতে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট
সার তৈরীর কার্যক্রম। উৎপাদিত এসব সার
নিজেদের ফসলি জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে এখন প্রতিমাসে তারা আয় করছেন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তাদের এই সাফল্য দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন এই স্যার তৈরীতে।
জানা গেছে , উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০২১ সালে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল প্রোগ্রাম ফেজ প্রজেক্ট এ (এনেটিপি-২) অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় নাজমা বেগম ও পারুল বেগম প্রশিক্ষণ নিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরী শুরু করেন।
পরে কৃষি অফিসের তৈরীকৃত হাউজিং পদ্ধতিতে ৫টি হাউজে নিজের গৃহপালিত গরুর গোবর হাউজে সংরক্ষণ করে সেখানে ১ কেজি কেঁচো ছেড়ে দেন। এর ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিটি হাউজ থেকে ৫০ থেকে ৬০ কেজি হিসেবে ৫টি হাউজ থেকে ২৬০ থেকে ২৮০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। নিজেদের জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি এখান থেকে প্রতিমাসে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা আয়ও করছেন তারা। শুধু তাই নয় হাউজে ছেড়ে দেওয়া কেঁচোও দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার কেঁচোও বিক্রি করেও আয় করছেন তারা।
নাজমা বেগম বলেন, এ সার তৈরিতে আমার খুব বেশি সময় দিতে হয় না। পারিবারিক কাজের পাশাপাশি এ সার তৈরি করে আসছি। কোন সমস্যা হলে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ নেই। কেঁচো সার তৈরী করে নিজের ফসলের ক্ষেতে প্রয়োগের। পাশাপাশি কেঁচো সার বিক্রি করে নিজের সংসার ও মেয়ের পড়াশুনার খরচের জোগান দিচ্ছি।
একই গ্রামের পারুল বেগম বলেন, কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে নিজের ফসলের জমিতে দেওয়ার জন্য কেঁচো সার তৈরী করি। সবজির ক্ষেতে কেঁচো সার দেওয়ায় সবজির ফলন খুব ভাল হয়। পরে আরো হাউজ বৃদ্ধি করে কেঁচো সার তৈরী করি। এখন নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছি।
স্থানীয় সার ব্যবসায়ী বাদল বলেন, গ্রামের দুই মহিলার থেকে প্রতি কেজি কেঁচো সার পাইকারী হিসেবে ১০ টাকা দরে কিনে কৃষকের নিকট ১২ টাকায় দরে বিক্রি করি। স্থানীয় কৃষকদের নিকট এই কেঁচো সারের চাহিদা খুব বেশি।
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলায় জৈব পদ্ধতিতে তৈরী সার ফসলে প্রয়োগের ফলে চাষাবাদে ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় ভার্মি কম্পোষ্ট উদ্যোক্তা তৈরী করেছি। যা অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। তারা এখন জৈব সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক ভাবে জৈব সারের চেয়ে ভার্মি কম্পোষ্ট সারে ৫গুন পুষ্টি থাকে। এতে ফসফরাস ও অন্যান্য উপাদান বেশি থাকায় শাক সবজির ক্ষেতে এটি ব্যাপক ভাবে কাজ করে। কৃষকেরা ভার্মি কম্পোষ্ট সারের তথ্য ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এর উপকারতিা পাওয়ায় কেঁচো কম্পোষ্ট সার তৈরীতে আগ্রহী হচ্ছে এবং এর চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।