ডেস্ক রিপোর্ট: ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর অন্তত ৩০ জন বৈমানিক বছরে আড়াই লাখ পাউন্ডের চাকরি পেয়েছেন চীনা বিমান বাহিনীতে। তারা চীনা বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কিভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর বিমান গুলি করে ভূপাতিত করতে হয়। এ খবর দিয়ে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল
প্রাক্তন ব্রিটিশ ফাইটার পাইলটদের চীনাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যাতে এধরনের আরো বৈমানিক চীনে চলে যেতে না পারে। সম্প্রতি লোভনীয় চাকরির অফার পেয়ে অন্তত ৩০ জন ব্রিটিশ পাইলটের চীনে চলে যাওয়ার খবরটি জানাজানি হলে এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আইনি ফাঁকফোকরের কারণে, এভাবে ব্রিটিশ পাইলটদের চীনে চলে যাওয়ার বিষয়টি ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের যেকোনো সংঘর্ষে চীনা পাইলটরা ব্রিটিশ পাইলটদের প্রশিক্ষণ পেয়ে অতিরিক্ত সুবিধা পাবে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির পক্ষে কাজ করা মধ্যস্থতাকারীরা আরও ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের শীর্ষস্থানীয় পাইলটদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তারা প্রস্তাবগুলি প্রত্যাখ্যান করেছেন। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেছেন যে ব্রিটেন তার মিত্রদের সাথে আলোচনা করছে যে কীভাবে চীনা প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান বা এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। ডেইলি মেইল জানতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার ফাস্ট-জেট পাইলটদেরও চীনের কাছ থেকে বড় অংকের বেতনে বিশাল চুক্তির প্রলোভন দেওয়া হয়েছে।
চীন ২০৪৯ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক শক্তি হতে চায়। বিমানবাহী রণতরী, স্টিলথ জেট এবং অস্ত্রশস্ত্রে বিপুল বিনিয়োগের কারণে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। যখন চীনকে ব্রিটেন সম্ভাব্য প্রতিযোগী ও ‘হুমকি’ হিসেবে দেখছে তখন দেশটির পাইলটদের চীনা পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি ব্রিটেনে সাড়া ফেলেছে। চীনা বিমান বাহিনীতে ৪ লাখ কর্মী রয়েছে। ২০১৭ সালে চীন জে-২০ স্টিলথ জেট বিমান পশ্চিমা সমর বিশেষজ্ঞদের মুগ্ধ করে। চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় বছরে প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২শ বিলিয়ন পাউন্ডের কাছাকাছি পৌঁছেছে। চীন ইতিমধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী গড়ে তুলেছে এবং বাহিনীতে কমপক্ষে ৩৬০টি যুদ্ধ জাহাজ ছাড়াও তিনটি বিমানবাহী রণতরী রয়েছে।
চীনে ব্রিটিশ পাইলটদের চাকরির বিষয়টি পশ্চিমা সমরবিশেষজ্ঞরা ব্রিটেন ও পশ্চিমা স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন এগুলি তৃতীয় পক্ষ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং লাভজনক প্যাকেজগুলি খুব উদার। তারা প্রায় নিশ্চিতভাবেই চীনের পাইলটদের জ্ঞান ও সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে, এই কার্যকলাপ প্রায় নিশ্চিতভাবে ব্রিটেন ও মিত্রদের প্রতিরক্ষা সুবিধার ক্ষতি করবে। তারা এও বলছেন যদিও চীন থেকে এসব ব্রিটিশ পাইলটদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো আইনী বাধ্যবাধকতা নেই, তারপরও এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্য সম্ভাব্য যেসব ব্রিটিশ পাইলটরা চীনে চাকরি নিয়ে যেতে চান তাদের হুমকি দিয়ে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানের সময় অর্জিত সংবেদনশীল তথ্য রক্ষা করার জন্য বাধ্যবাধকতার কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, চীনের বৈমানিকদের অনুশীলনটি ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল, মহামারী চলাকালীন তা ধীর হয়ে গিয়েছিল, তারপরে চীনে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর এটি বাড়ানো হয়। প্রশিক্ষণের জন্যে চীনারা দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রাইভেট ফ্লাইং একাডেমি ব্যবহার করে। এমনকি ব্রিটেনের সামরিক হেলিকপ্টার পাইলটদের সঙ্গেও চীনারা যোগাযোগ শুরু করেছেন।