1. aknannu1964@gmail.com : AK Nannu : AK Nannu
  2. admin@asianbarta24.com : arifulweb :
  3. angelhome191@gmail.com : Mahbubul Mannan : Mahbubul Mannan
  4. info@asianbarta24.com : Dev Team : Dev Team
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

টাংগাইলে গত ১৩ বছরে চার বাসে ডাকাতি তিন নারী ধর্ষিত ও দুই জন খুন

  • আপডেট করা হয়েছে : শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২
  • ১৭ বার দেখা হয়েছে

পিন্টু জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইলঃ
টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে মধুপুর বনাঞ্চলের নির্জন এলাকায় গত ১৩ বছরে চার বার চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনজন নারী যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন এবং খুন হয়েছেন দুই নারী।

স্থানীয়দের দাবি- এর বাইরেও অনেক ছোটখাটো ঘটনা ঘটে। এগুলো খুব একটা জানাজানি হয় না। অপরাধীরা সহজেই পালাতে পারছে বলে বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকলে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতা না থাকলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

পুলিশ, ভুক্তভোগী ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাসন্তী মাংসাং বনাঞ্চলের জলছত্র থেকে টেলকি যাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে স্কুলের শিশুদের টাকা ছিল। পথে ডাকাতরা বাসন্তীকে কুপিয়ে হত্যা করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাসন্তীর স্বামী যতীশ নকরেক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান, মামলা এখনও চলমান রয়েছে- আসামিরা জামিনে বের হয়ে গেছে। আদালতে তিনি নিয়মিত হাজিরা দিলেও আসামিরা উপস্থিত হন না। তিনি ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দিহান। এ ডাকাতদের তিনি উপযুক্ত বিচার চান।

২০১৬ সালের ১ এপ্রিল এক নারী পোশাককর্মী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে ভোর ৫টার দিকে ‘বিনিময় পরিবহন’ নামক একটি বাসে কালিয়াকৈরের উদ্দেশে রওনা দেন। বাসে আর কোনো যাত্রী ছিল না। বাসটি কিছুদূর যাওয়ার পর চালকের সহকারী (হেলপার) বাসের জানালা-দরজা বন্ধ করে দেন। পরে গাড়ির চালক হাবিবুর রহমান নয়ন পেছনের সিটে(আসনে) নিয়ে ভোগ করেন। এরপর বাসের সুপারভাইজার-হেলপাররাও তাকে দলবেধে ভোগ করেন। তার চিৎকার-চেচাঁমেচিতে কেউ ভ্রুক্ষেপও করেনি।
এরপর টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের একটি ফাঁকা জায়গায় ওই নারীকে নামিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যান। ওই নির্যাতিত নারীর স্বামী বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তদন্ত শেষে চারজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়ে ছয়জনকে অব্যাহতি দেয়। টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিশেষ পিপি নাসিমুল আক্তার জানান, ২০১৯ সালের ২২ মে মামলার রায়ে চারজনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। পরে আসামিরা উচ্চ আদালতে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জের জাকিয়া সুলতানা রূপা চলন্ত বাসে পরিবহন শ্রমিকদের যৌন নিগ্রহের শিকার হন। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে দেয়। পুলিশ ওই রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। ২০১৮ সালে দলবেধে যৌন নিগ্রহ ও হত্যা মামলায় চার আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

জব্দকৃত ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি রূপার পরিবারকে হস্তান্তর করার নির্দেশও দেন আদালত। রূপার ভাই হাফিজুর রহমান জানান, আসামিরা আপিল করায় মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। কবে মামলার রায় কার্যকর হবে সেটা নিয়ে তারা সংশয়ে রয়েছেন।

সর্বশেষ কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের একটি বাসটি বুধবার(৩ আগস্ট) ভোরে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির স্তুপে রেখে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় হেকমত আলী নামে এক যাত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ওই বাসের ডাকাতরা এক নারী যাত্রীর উপর পালাক্রমে যৌন নিগ্রহ চালায়। ওই নারীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলে প্রাথমিকভাবে যৌন নিগ্রহের আলামত পাওয়া যায়।

তিনি আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। বাসটিতে ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ১২-১৩ জন নারী যাত্রী ছিল। বাসের সবাইকে জিম্মি করে টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোনসব ডাকাতরা লুট করে নেয়। রাত দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাসটি ডাকাতদলের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ডাকাতদের তিন জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
মধুপুর জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, মধুপুর বনাঞ্চল এলাকার নির্জন স্থানে নারীদের উপর যৌন নিগ্রহ সহ প্রায়ই ছোটখাটো অপরাধ হয়ে থাকে। কিছু ঘটনা জানাজানি হয়- আবার অনেক ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায়।

মধুপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, মধুপুর বনাঞ্চল নির্জন এলাকা হওয়ায় অপরাধীরা নিরাপদ মনে করে। তাই চলন্ত বাসে ডাকাতি, হত্যা, নারীদের উপর যৌন নিগ্রহ এ এলাকায় বার বার ঘটছে। আঞ্চলিক মহাসড়কের জলছত্র থেকে রসুলপুর পর্যন্ত আগে প্রায়ই প্রান্তিক পরিবহনে ডাকাতি হতো। তখন পুলিশ যাত্রীদের একত্রিত করে অনিরাপদ সড়কটুকু পাহারা দিয়ে পার করে দিত। এখন সে ব্যবস্থা না থাকায় রাতে চলাচলকারী যাত্রীরা অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।

টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আজাদ জানান, ডাকাতদল ও অপরাধীরা মধুপুরের নির্জন স্থানে নিয়মিত অঘটন ঘটাচ্ছে। এ সড়কে মানুষের জানমাল প্রায়ই হুমকির মুখে পড়ে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও জানান- অপরাধী বাসচালক, হেলপারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে বাসে এ ধরনের ঘটনা কমে যাবে।

মধুপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন জানান, বাসে ডাকাতির ঘটনায় অনেক সময় চালক-হেলপারদের সঙ্গে ডাকাতদলের সদস্যদের যোগসাজশ থাকে বলে শোনা যায়। কিন্তু ঈগল বাসের এ ঘটনার সঙ্গে এখন পর্যন্ত সে ধরনের যোগসাজশ পাওয়া যায়নি। মানুষের নিরাপত্তার জন্য এ সড়কে পুলিশি টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হবে বলে জানান তিনি।

বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন

এরকম আরও বার্তা
স্বত্ব © ২০১৫-২০২২ এশিয়ান বার্তা  

কারিগরি সহযোগিতায় Pigeon Soft